২০১১ সালে বাংলাদেশ ১০২ ডিগ্রি অরবিটাল স্লটের জন্য রাশিয়ার সর্ববৃহৎ স্যাটেলাইট কোম্পানি ‘ইন্টারস্পুটনিক’ এর কাছ থেকে অরবিটাল স্লটের জন্য চুক্তি করে। কিন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া সহ প্রায় ২০টি দেশ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বাধা দেয়। কারণ ছিল ১০২ ডিগ্রি স্লট নিয়ে ১০২ ডিগ্রির আশেপাশে অন্যান্য স্যাটেলাইটের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট এবং সেই সাথে অন্যান্য স্যাটেলাইটেও ফ্রিকোয়েন্সি পেতে সমস্যা হতে পারে।

তখন ৬৯ ডিগ্রি স্লটের জন্য আবেদন করে। তা বাতিল করতে হয় সিঙ্গাপুর, চীন এবং মালয়েশিয়ার সম্ভাব্য আপত্তির কারণে। তাই স্পুটনিকের কাছ থেকে ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ স্লট কিনে নেয়া হয়, যার জন্য খরচ পড়েছে প্রায় ২১৯ কোটি টাকা (২.৮০ কোটি মার্কিন ডলার)। কিন্তু আমাদের দেশের অবস্থান ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বিধায় স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ইন্দোনেশিয়া বরাবর।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের প্রাথমিক মেয়াদ ১৫ বছর। এর মানে হলো ‘স্পুটনিক’ আমাদেরকে তাদের ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমারেখাকে ১৫ বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছে। তবে আরও দু’বার ১৫ বছর করে আরও ৩০ বছর পর্যন্ত কক্ষপথ কেনা যাবে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকার আরও দুটি স্লটের জন্য আবেদন করবে। স্লট দুটি হলো ৬৯ ডিগ্রি পূর্ব এবং ১৩৫ ডিগ্রি পূর্ব। অদূর ভবিষ্যতে আরও ২টি স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীর কভারেজ নেয়া সম্ভব হবে।

২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু- ১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে চূড়ান্ত অনুমোদিত হয়। এই অর্থের যোগান আসছে দুই ভাবে এক, সরকারি তহবিল দুই, এইচএসবিসি ব্যাংক ঋণ। 
ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করতে ১ বছরের বেশি সময় নেয়। এরপর ২০১৮’র মার্চে বিশেষ কার্গো বিমানে করে একে উৎক্ষেপণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত নাসার জন এফ কেনেডি স্পেস সেন্টারে পাঠানো হয়।যে রকেটে করে মহাকাশে স্যাটেলাইটটিকে পাঠানো হয় সেটি হলো স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-৯ ব্লক ৫ রকেট। ১০ই মে যাত্রা করার কথা থাকলেও স্পেসএক্সের যান্ত্রিক ত্রূটির কারণে আরও একদিন পিছিয়ে ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় ১১মে বিকেলে উৎক্ষেপণ করা হয় । তখন বাংলাদেশ সময় ছিল ১২মে ২০১৮ (ভোর ২টা ১৪ মিনিট) প্রথম ৩ বছর থ্যালাস অ্যালেনিয়ার সহায়তায় এটির নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলাদেশ। পরে পুরোপুরি বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের হাতেই গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া আর্থ স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে এটি।
তবে একটা কথা জানা থাকা ভাল বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট নয় প্রথম স্যাটেলাইট হচ্ছে “ব্র্যাক অন্বেষা”, সেটা একটা পোলার ন্যানো-স্যাটেলাইট যেটা পাঠানো হয়েছে ৩ জুন, ২০১৭ তারিখে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সংক্ষিপ্তসার


তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান : থেলিস অ্যালেনিয়া স্পেস (ফ্রান্স )
উৎক্ষেপণ তারিখ : বাংলাদেশ সময়-১২মে ২০১৮ (ভোর ২টা ১৪ মিনিট) স্যাটেলাইট বিশ্বে ৫৭ তম দেশ। 
উৎক্ষেপণ স্থানযুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার
উৎক্ষেপণ রকেট স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-৯ ব্লক ৫
উদ্দেশ্য : যোগাযোগ এবং সম্প্রচার
অরবিট স্লট : ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমারেখা 
গ্রাউন্ড স্টেশন : গাজীপুরের জয়দেবপুর (প্রধান)  ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া
সময়কাল: ১৫ বছর। 
ক্ষমতা : ৬ kw 
ওজন : ৩৭০০ কেজি বা ৩.৭ টন 
ট্রান্সপন্ডার : ৪০ টি (১৪ সি ব্যান্ড, ২৬ কু ব্যান্ড) ২০টি বাংলাদেশ নিজে ব্যবহার করবে আর বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিভিন্ন দেশ বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেয়া হবে।

সুবিধা সমূহ 

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট অন্তত ৪০ ধরনের সেবা দেবে 
১. টেলিভিশন সম্প্রচার
৫. টেলিমেডিসিন,
৬. ই-লার্নিং,
৭. ই-গবেষণা,
৮. ভিডিও কনফারেন্স
৯. প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
১০. প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা প্রদান 
১১. ব্যাংকিং সেবা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের বছরে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।