স্যাটেলাইট কি?

স্যাটেলাইট হল কৃত্তিম উপগ্রহ যা মহাকাশের বিভিন্ন কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এরা পৃথিবীর চারদিকে ডিম্বাকার পথে পৃথিবীকে পরিভ্রমণ করে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর একটি নির্দিষ্ট দ্রুতি প্রদান করতে হয় যাতে কক্ষপথে ঘুরতে থাকে এবং কেন্দ্রমুখী বলের মাধ্যমে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
কোনো বস্তুকে ১১.২ কি.মি/সেকেন্ড বেগে উপরে নিক্ষেপ করলে তা আর পৃথিবীতে ফেরত আসে না এই বেগ কে মুক্তি বেগ বলা হয়। অর্থাৎ চাঁদের মত পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু একটি স্যাটেলাইটকে ২৫০ কি.মি. উপরে তুলে এবং পৃথিবী পৃষ্ঠের সমান্তরালে এমন ভাবে উৎক্ষেপ করতে হবে যেন তা প্রতি সেকেন্ডে ৮ কি.মি পথ অতিক্রান্ত করে। যা রকেটের সাহায্য ছাড়া একদমই অসম্ভব।
কৃত্রিম উপগ্রহ এমনভাবে পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান হয়, যাতে এর গতির সেন্ট্রিফিউগাল বা বহির্মুখীন শক্তি ওকে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে - কিন্তু পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। উভয় শক্তি কৃত্রিম উপগ্রহকে ভারসাম্য প্রদান করে এবং কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে।

কক্ষপথের উপর ভিত্তি করে স্যাটেলাইট এর প্রকারভেদ 


স্যাটেলাইট ৩ প্রকার 

1. LEO (Low Earth Orbit)
2. MEO (Medium Earth Orbit)
3. GEO (Geostationary Earth Orbit)

Low Earth Orbit 


LEO ( Low Earth Orbit ) – পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৬০-২০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। সাধারণত পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইটগুলো এই কক্ষপথে থাকে। পৃথিবী পৃষ্ঠের খুব কাছে থাকায় এই কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীকে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। আন্তর্জাতিক স্পেস ষ্টেশন এই কক্ষপথে অবস্থিত।

Medium Earth Orbit

MEO ( Medium Earth Orbit) – পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ২০০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। সাধারণত জিপিএস স্যাটেলাইট গুলো এই কক্ষপথে থাকে। এই কক্ষপথের স্যাটেলাইট গুলোর গতিবেগ কম। এই স্যাটেলাইটগুলো পাঠাতে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়।

Geostationary Earth Orbit

GEO (Geostationary Earth Orbit) – GEO পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩৬০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। এই কক্ষপথে অ্যান্টেনা এর অবস্থান নির্দিষ্ট থাকে। সাধারণত রেডিও এবং টিভি এর ট্রান্সমিশনের কাজে ব্যাবহার করা হয়।

কাজের উপর ভিত্তি করে স্যাটেলাইট এর প্রকারভেদ 

1. Communication/ Geostationary satellite
2. Polar Orbiting Satellite
3. Weather Satellite
4. Navigation Satellite
এরকম আরো অনেক স্যাটেলাইট আছে তার মধ্যে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট এবং পোলার স্যাটেলাইট বেশি ব্যবহার করা হয়। 

Communication/ Geostationary satellite

এক কথায় যোগাযোগ সম্পন্নের জন্য যে স্যাটেলাইট। অর্থাৎ, আপনি যদি কোনো স্যাটেলাইটকে পৃথিবীপৃষ্ঠ হতে প্রায় ৩৫ হাজার ৭৮৬ কি.মি. উচ্চতায় স্থাপন করেন তবে তার পৃথিবীর চারদিকে সমবেগে একবার আবর্তন করতে সময় লাগবে ২৪ ঘন্টা(২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড)। আবার পৃথিবীও নিজ কক্ষপথে চারদিকে একবার ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে সময় নেয় ২৪ ঘন্টা। তার মানে পৃথিবীর সাপেক্ষে আপনি ভূ-উপগ্রহকে দেখলে মনে হবে স্থির হয়ে আছে। আর যেহেতু ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে কক্ষপথ স্থির সেহেতু এই কক্ষপথের নাম হচ্ছে জিওস্ট্যাশনারি অরবিট বা ভূ-স্থির কক্ষপথ।
তবে একটু সমস্যা আছে । আমাদের পৃথিবীর আকৃতিগত বক্রতার কারণে এই ধরণের শুধু একটি স্যাটেলাইট যোগাযোগ রক্ষার্থে পুরো পৃথিবীকে সেবাদান করতে পারে না ।
সেক্ষেত্রে তিনটি স্যাটেলাইটকে পরষ্পর ১২০ ডিগ্রি কোণে জিও স্ট্যাশনারী অরবিটে স্থাপনের মাধ্যমে সহজেই পুরো পৃথিবীর কভারেজ প্রদান সম্ভব।
কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের টেলিভিশন সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ, রেডিও বার্তা প্রদান, দ্রুতগতির নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা ইত্যাদি নিশ্চিত হবে।
আর আমাদের বঙ্গবন্ধু-১ হচ্ছে ঠিক এরকম ভূ-স্থির কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট।

 Polar Orbiting Satellite


নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে, এটার ঘূর্ণনগতি হচ্ছে পোল টু পোল, মানে উত্তর দক্ষিণ বরাবর। যেহেতু পৃথিবী ঘুরে পূর্ব পশ্চিম বরাবর এবং এই স্যাটেলাইট ঘুরে উত্তর দক্ষিণ বরাবর, তাই এটা পৃথিবীর কোনো একটা অবস্থানের সাপেক্ষে কখনোই স্থির থাকে না, বরং একেকবার পৃথিবীর একেক অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে। এই ধরণের স্যাটেলাইট মূলত ব্যবহার হয় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য। এটির উচ্চতাও জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট এর তুলনায় অনেক কম।